প্রারম্ভিক জীবন ও ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার
ডোনাল্ড জন ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন একজন সফল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। ব্যবসায়িক পরিবেশে বড় হওয়ার কারণে ট্রাম্প অল্প বয়স থেকেই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর তিনি পারিবারিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় যোগ দেন এবং ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল হোটেল, ক্যাসিনো ও স্কাইস্ক্র্যাপার প্রকল্পের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন।
ট্রাম্প টাওয়ার, আটলান্টিক সিটি ক্যাসিনো এবং বিভিন্ন রিয়েলিটি শো (যেমন The Apprentice) তাঁকে মূলধারার আমেরিকান সংস্কৃতিতে একটি পরিচিত নাম বানিয়ে তোলে।
রাজনীতিতে প্রবেশ ও ২০১৬ সালের নির্বাচন
দীর্ঘদিন রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক থাকলেও, ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০১৫ সালে, যখন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।
তাঁর প্রচারণা ছিল অভিবাসন সীমিতকরণ, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি, এবং চাকরি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর।
মূলধারার মিডিয়ার সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি সাধারণ মানুষের বড় অংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হন—যা অনেকের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত এক ফলাফল। আরও জানুন
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নীতি ও সিদ্ধান্ত
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি (২০১৭–২০২১) ছিল একাধিক বড় ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ভরপুর।
তিনি করপোরেট ট্যাক্স কমান, অভিবাসন নীতি কঠোর করেন, এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন।
বাণিজ্যে চীন, মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেন, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আলোচনার জন্ম দেয়।
তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের উদ্যোগ (Abraham Accords) নেন, যা তাঁর সমর্থকদের মতে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য ছিল।
তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় তাঁর নেতৃত্ব, স্বাস্থ্য নীতি এবং তথ্য উপস্থাপন ব্যাপক সমালোচিত হয়।
বিতর্ক, ইমপিচমেন্ট ও সমালোচনা
ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিতর্কে ভরপুর। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত হয়, যদিও সরাসরি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি।
২০১৯ সালে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁকে প্রতিনিধি পরিষদ ইমপিচ করে, কিন্তু সিনেটে তিনি অব্যাহতি পান। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার ঘটনার পর আবারও ইমপিচমেন্ট হয়, যা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দু’বার ইমপিচড হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট বানায়।
মিডিয়ার সাথে তাঁর তিক্ত সম্পর্ক, সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য, এবং বিভাজনমূলক ভাষণ তাঁকে সমালোচকদের কাছে চরমপন্থী ও অস্থির নেতার প্রতীক বানিয়েছে।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে রয়ে গেছেন। তাঁর সমর্থকরা তাঁকে একজন “আউটসাইডার” হিসেবে দেখে, যিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা শেষ হয়নি।
ট্রাম্পের নীতি, বক্তব্য ও রাজনৈতিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে দীর্ঘদিন প্রভাবিত করবে—যা তাঁকে ২১শ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।